কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে একটি নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, যার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিযুক্ত করা হয়েছে।
ছবি প্রথম আলো থেকে নেওয়া |
৬ আগস্ট ২০২৪, কোটা সংস্কার আন্দোলনের চাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এর কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে দেশত্যাগ করেন, ফলে দেশ সরকারের শূন্যতায় পতিত হয়। শেখ হাসিনার পদত্যাগে দেশজুড়ে ছাত্র-জনতা বিজয়োল্লাসে মেতে ওঠে, যা দীর্ঘদিন ধরে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। তবে প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে দেশের কার্যক্রম সচল রাখতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ১৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।
গত ০৬ আগস্ট ২০২৪, বঙ্গভবন মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে তিন বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের বৈঠকের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করা হয় এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির প্রেক্ষিতে এবং সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে রাষ্ট্রপতির আলোচনার ফলাফল হিসেবে, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা এবং বাকী ১৬ জনকে উপদেষ্টা করে নতুন সরকার গঠিত হয়। এই সরকারে ১৩ জন উপদেষ্টা ৮ আগস্ট ২০২৪, রাত ৯ ঘটিকায় শপথ গ্রহণ করেন।
উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, মানবাধিকার সংগঠন 'অধিকার' এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুর্শিদ, মহান মুক্তিযুদ্ধে অপারেশন জ্যাকপটের উপ-অধিনায়ক ফারুকী আজম, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ডা. বিধান রঞ্জন রায়, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর সাবেক নায়েবে আমীর আ ফ ম খালিদ হাসান, মানবাধিকার কর্মী ও গবেষক ফরিদা আখতার, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরজাহান বেগম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ।
৯ আগস্ট ২০২৪ সকালে, মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহিদের প্রতি পুষ্পার্পণ করে নতুন গঠিত সরকার কার্যক্রম শুরু করে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বণ্টন সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব পালন করবেন, যার মধ্যে রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ প্রজ্ঞাপনে আরও ১৩ জন উপদেষ্টার মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। এর মধ্যে জনাব সালেহ উদ্দিন আহমেদ অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ড. আসিফ নজরুল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জনাব আদিলুর রহমান খান শিল্প মন্ত্রণালয়, জনাব হাসান আরিফ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, জনাব মোঃ তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, মিজ শারমীন এস মুরশিদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মিজ ফরিদা আখতার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মিজ নুরজাহান বেগম স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনাব মোঃ নাহিদ ইসলাম ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিযুক্ত হয়েছেন।
0 Comments